পেকুয়ায় জলমহাল নিয়ে অভিযোগের তদন্তে ইউএনও

পেকুয়া প্রতিনিধি :

পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন এলাকায় ইজারাকৃত জলমহল সংস্কার করতে গিয়ে গাছ কর্তন, অন্যের জমি জবর দখল, মসজিদের শৌচাগার ভেঙ্গে দেওয়া, জলমহলে বাধ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্ঠি ও লবণাক্ত পানি ঢুকিয়ে ক্ষতি সাধনসহ অারো কয়েকটি অভিযোগ এনে চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদুক) বরাবরে দায়ের করা লিখিত অভিযোগের সরেজমিনে তদন্ত করেছেন পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবউল করিম।

সোমবার (১৭জুন) দুপুরে তিনি এ তদন্তকাজ সম্পন্ন করেন। এসময় তিনি পুরো জলমহাল এলাকা ঘুরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একই ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ সভাপতি তোফাজ্জল করিম ও সাধারণ সম্পাদক শাহজামাল, মৃত মফজুলুর রহমানের পুত্র মোঃ রহিম, সাবেক মেম্বার আহমদ ছফা এ অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। এ অভিযোগের তদন্তভার পান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাবুবউল করিম। তদন্তের নির্দেশনা পেয়ে উভয় পক্ষকে নোটিশের মাধ্যমে গতকাল সোমবার উপস্থিত থাকতে বলা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা সোমবার দুপুরে সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে ইজারাকৃত জলমহলের উভয় পাশের বসবাসকারী লোকজনের সাথে কথা বলেন। তদন্তকারী কর্মকর্তাকে খালের উভয় পাশের বাসিন্দারা স্বতস্ফুর্তভাবে বলেন চেয়ারম্যানের বা জলমহাল সংস্কার কয়ায় তাদের কোন ধরণের ক্ষতি হচ্ছেনা বরং বসতবাড়ি ভাঙ্গণ হতে রক্ষা পাচ্ছে।স্থানীয় বাসিন্দা মাহফুজা বেগম নামে এক মহিলা তার মালিকানাধীন জমি জবর দখল করার অভিযোগ করলেও ঐ জমির মালিকানার স্বপক্ষ কোন কাগজ পত্র দেখাতে পারেনি।সর্বশেষ জলমহলের উভয় পাশে বসবাসকারী বাসিন্দাদের বক্তব্য অনুযায়ী অভিযোগের সত্যতা পায়নি তদন্তকারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাবুবউল করিম।

এদিকে উজানটিয়ার নুরীর পাড়া এলাকার এ জলমহাল সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর সাথে সরেজমিন কথা বলে ও গোপনে তদন্ত করার পর প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মাহবুবউল করিম।

ব্রিফিংকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা মাহাবুবউল করিম বলেন, স্থানীয় কয়েকজন এলাকাবাসী ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ এনে দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। দুদুক থেকে ডিসি মহোদয়কে বিষয়টি তদন্ত করার দায়িত্বভার প্রদান করেন। ডিসি মহোদয় দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার জন্য অামাকে নির্দেশ প্রদান করেন। সোমবার বেলা ১১টার দিকে অামি সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন পূর্বক এলাকাবাসীর সাথে কথা বলি। অভিযোগের ৫ পয়েন্টের ৪টির কোন ধরণের সত্যতা পাওয়া যায়নি। ইজারাকৃত জলমহলটি ২০ একর। তার মধ্যে ১একর মত জায়গায় ইজারাদার বাধ দিয়ে মাছের পোনা রাখার স্থান (নার্চারী) করেছেন। তিনি জলমহলটি শ্রেণী পরিবর্তন করতে পারেন না। বাধটি খুলে দিতে হবে।

এসময় তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে ছিলেন উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগো শান্তি রঞ্জন চাকমা, সার্ভেয়ার খাদেমুল ইসলাম, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদার রফিকুল ইসলাম ও ইউএনও অফিসের সহকারী ফরিদুল আলম প্রমূখ।

জলমহালটির পাড়ের বাসিন্দা সাফিয়া বেগম, রবি অালম, নওশা মিয়া, তোফাইল ও লুতা মিয়াসহ অারো কয়েকজন বলেন, জলমহলটির অাশেপাশে কোন ধরণের গাছ কাটা হয়নি। ১৯৯১সালের পর থেকে জলমহলটিতে লবণাক্ত পানি রয়েছে। অামরা কেউ জলমহলটির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। অামরা তা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।

উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জলমহালের ইজারাদার শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে জলমহলটি ইজারার জন্য নিলাম অাহ্বান করলে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসাবে আমি ইজারাপ্রাপ্ত হই।ইজারা পাওয়ার প্রথম বছরে জলমহলের উভয় পাশে টেকসই বাঁধ না থাকার দরুণ আমার বিনিয়োগকৃত পুরো অর্থ পানিতে ভেসে যায়। তাই এবছর জলমহলটি সংস্কার করে মাছ চাষের উপযোগী করেছি। কারো ক্ষতি হয় মত কোন কাজ করা হয়নি। বাংলাদেশ অা’লীগ থেকে মনোনীত দুই মেয়াদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে স্থানীয় একটি চক্র অামার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে অাসছে। আমাকে হয়রানি করছে। এরই ধারাবাহিকতায় চক্রটি মিথ্যাভাবে একটি অভিযোগ দায়ের করে। যা অাজ দিবালোকের মত সত্য প্রমাণীত এবং সাংবাদিক ভাইদের প্রতি বিনীত অনুরোধ সত্য উৎঘাটন করে প্রশাসনসহ এলাকাবাসীর নজরে আনবেন।